অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন হতে চলল। মূল্যস্ফীতি তো এখনো অনেক বেশি।
মূল্যস্ফীতি এত বেশি কেন?
আহসান এইচ মনসুর: মূল্যস্ফীতির হার আগে থেকেই বেশি ছিল। এটি এত দিন
কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানো হতো। মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র এখন প্রকাশ করা
হচ্ছে। অর্থনীতিতে এত বড় গর্ত করে রেখে গিয়েছে আগের সরকার…। অতিরিক্ত
ঋণ, অর্থ পাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এ গর্ত তৈরি করা হয়েছে। এত সহজে কি
এগুলো ঠিক করা সম্ভব?
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আপনারা কী করেছেন বা করছেন?
মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক আছে। দেখি, আর কী করতে পারি। এখন একটু
থামলাম। মুদ্রানীতি পরে আরও সংকোচনমূলকও করতে পারি। নীতি সুদহার
কয়েক দফায় বাড়িয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পর ফল
পেতে কোনো কোনো দেশে ১৮ মাস লাগে। আমাদের লাগবে ১২ মাস। তা–ও
এখন থেকে নয়। একটু পেছনে গিয়ে গত জুলাই থেকে ১২ মাস। আমি খুবই
আশাবাদী।
আপনার এই আশাবাদের ভিত্তি কী?
পণ্য আমদানিতে এখন আর ঋণপত্রের (এলসি) মার্জিন বা নগদ জমার সীমা
তুলে নেওয়া হয়েছে। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে আমদানি
শুল্ক। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব আগামী মাসেই পড়তে পারে, আবার
না–ও পারে। কারণ, আমাদের বুঝতে হবে গত মাসে একটা বন্যা হয়েছে। বন্যার
একটা প্রভাব কিন্তু বাজারে পড়তে বাধ্য। আবার বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম
বেড়েছে। যেমন সয়াবিন তেলের দাম হয়ে গেছে প্রতি টন ১ হাজার ২০০ মার্কিন
ডলার।
আমার আশাবাদের অন্য আরেকটি ভিত্তি হচ্ছে রপ্তানিতে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি। গত
চার মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর গত মাসে (অক্টোবর)
প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। প্রবাসী আয়ও (রেমিট্যান্স) ভালো আসছে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের কথা যদি বলি, এটা নিম্নমুখী
হবে ঠিক। তবে এ হার নেতিবাচক হয়নি, হবেও না। আর আমাদের মাথাপিছু
আয় কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়নি।
নয়। কিন্তু কয়েকটি নিত্যপণ্যে এলসি কম খোলা হয়েছে বলে বাংলাদেশ
ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থা এখন ভালো আছে। কোনো ব্যাংক যদি এলসি
না খোলে বা কোনো ব্যবসায়ীকে ফিরিয়ে দেয়, তাহলে তিনি যেন আমার কাছে
আসেন।
নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ভর্তুকি দামে টিসিবির মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য
বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে যে পরিমাণ পণ্য রাখা হয়, তা দিয়ে ৩৫০ জনকে
পণ্য দেওয়া যায়। লাইনে থাকে আরও মানুষ। এর প্রতিকার কী?
মানুষের কষ্ট তো হচ্ছেই। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা চেষ্টা
করছি মানুষের কষ্ট কতটা লাঘব করা যায়।