সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কানাইপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মাদক কারবারি কুটি মিয়া বিপুল অস্ত্র ও মাদকসহ আটক ফরিদপুরে পদ্মায় ধরা পড়ল ৪২ কেজি ওজনের বাগাড়, বিক্রি হলো ৬২ হাজার টাকায় রৌমারীতে আবাদি জমির মাটি কেটে বিক্রি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে ট্রাক্টর জব্দ রাজিবপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত দম্পতির বাচার আকুতি। শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষের উদ্যোগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন ১২ শিক্ষার্থী জামালপুরের শ্রীপুরে সড়ক পাকা করণের দাবি বকসিগঞ্জ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মুত্যু কুয়াকাটায় অতিরিক্ত মদ্যপানে পর্যটকের মৃত্যু ঋণ নয় ক্ষতিপূরণের ন্যায্যতার দাবিতে পাথরঘাটায় সাইকেল র‍্যালি শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নওগাঁয় সরিষা মৌসুমে ১১ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের টার্গেট

রিপোর্টার :

সংবাদটি শেয়ার করুন....

স্টাফ রিপোর্টার

নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা খেতে ফলন আসায় এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এসব খেতের পাশেই মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণও করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি।

চলতি মৌসুমে ২৭০ মেট্রিক টন বা ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় সরিষা ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।

এবার মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ হেক্টর। উপজেলার তেঁতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরিষা খেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, সরিষা খেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে সরিষার ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি সরিষা ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায়, তাতে সরিষার দানা ভালো হয় ও ফলন বাড়ে। যে সরিষাখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকে না, সেখানে ফলনও কম হয়।

নওগাঁয় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

শুক্রবার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষাখেত। পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন আবু বক্কর (সুজন)। পাশের পিরাকৈর মাঠে তার আরও একটি মৌমাছির খামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌবাক্স রয়েছে। তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।

সুজন বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌবাক্স বসিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে ৪ বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে সাত থেকে আট কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। সরিষা খেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।

সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌ খামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় বছর ধরে নিজের সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ লাখ ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ছয় থেকে সাতজন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌবাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌমাছি সরিষা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার ফলন বাড়ছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। সরিষার সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


সংবাদটি শেয়ার করুন....



আমাদের ফেসবুক পেজ