সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রৌমারীতে আবাদি জমির মাটি কেটে বিক্রি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে ট্রাক্টর জব্দ রাজিবপুরে ক্যান্সারে আক্রান্ত দম্পতির বাচার আকুতি। শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষের উদ্যোগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন ১২ শিক্ষার্থী জামালপুরের শ্রীপুরে সড়ক পাকা করণের দাবি বকসিগঞ্জ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মুত্যু কুয়াকাটায় অতিরিক্ত মদ্যপানে পর্যটকের মৃত্যু ঋণ নয় ক্ষতিপূরণের ন্যায্যতার দাবিতে পাথরঘাটায় সাইকেল র‍্যালি শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জামালপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পেল মানবিক সহায়তা সেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের কেন্দ্রীয় পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

‘বৃদ্ধ মা নাতিপুতিদের নিয়ে ঘরে ছিলেন, ঘরের মধ্যে রেখেই আগুন দিয়ে দিছে’

রিপোর্টার :

সংবাদটি শেয়ার করুন....

 

‘তারা শত শত মানুষ এসে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। আমাদের সবকিছু ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধ মা ছোট নাতিপুতিদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। ঘরের মধ্যে রেখেই আগুন দিয়ে দিছে। বাড়ির মহিলা, বাচ্চা সবাইরে মারছে ও রক্তাক্ত করছে। প্রশাসনের সামনেই আমাদের ঘরে আগুন দিয়ে দিছে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার কুলিয়াদাইড় গ্রামে বিএনপি নেতা রুহুল আমিনের পোড়া বাড়িতে তাঁর বোন ফরিদা ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই অভিযোগ করছিলেন জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের কাছে। তাঁর দাবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে আকুতিমিনতি করলেও তারা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে আসেনি। আগুন দেওয়ার আগে তারা এলাকায় পৌঁছালেও বাড়িঘর বাঁচাতে সাহায্য করেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিনের সঙ্গে ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। গত সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। এর জেরে গতকাল দুপুরে ও বিকেলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় রুহুল আমিন এবং তাঁর সাত ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ওই ঘটনা ঘটে।

রুহুল আমিনের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রুহুল আমিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হতে চান। এ কারণেই তাঁর প্রতিপক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে শত শত লোক আমাদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।’

তবে এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ, মামলাও হয়নি। আজ বিকেলেও কুলিয়াদাইড় গ্রামের ওই বাড়িগুলো থেকে পোড়া গন্ধ নাকে আসছিল। দফায় দফায় বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তারা ওই বাড়িগুলো পরিদর্শন করছিলেন। পুরুষ সদস্যরা বাড়িগুলোতে নেই। তবে নারী ও শিশুরা গতকালের নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এ সময় নারীদের বেশ কয়েকজনের শরীরে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা যায়।

রুহুল আমিনের আগুনে পোড়া বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাটের কুলিয়াদাইড় গ্রামে
রুহুল আমিনের আগুনে পোড়া বাড়ি যেন ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাগেরহাটের কুলিয়াদাইড় গ্রামের ছবি

দুপুরের পর সেখানে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা। বিকেলের দিকে সেখানে আসেন পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ।

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শামীমুর রহমান বলেন, ‘যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনকে বলব এরা কোনো দলের না, এরা সন্ত্রাসী। এদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন তিনি।

ঘটনাস্থলের প্রায় ৫০০ মিটার দূরে প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি। দুই বাড়ির মাঝখানে রাস্তার মোড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের চলাচল কম, একটা থমথমে পরিবেশ, সবার মধ্যে একটি চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, ‘রুহুল মেম্বাররা এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে। তারা একাধিকবার আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে। গতকালও আমাদের ভাইপো মামুন মোল্লা ও মাহমুদ মোল্লাকে মারধর করে, তাদেরকে নিয়ে আমার স্বামী হাসপাতালে ছিল। বিকেলে খবর আসে, আমাদের বাড়িতে রুহুল মেম্বারের লোকজন আবার হামলা করতে আসতেছে, তখন বংশের লোকজন এগিয়ে যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে, তা আমরা জানি না।’

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, ‘আগে থেকেই সেখানে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা ছিল। একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটে। আবারও গ্যাঞ্জামের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সেখানে যায়। আমাদের উপস্থিতির কারণে বড় অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেখানে পুলিশ আগুন নেভানোর কাজেও অংশ নেয়। অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে।


সংবাদটি শেয়ার করুন....



আমাদের ফেসবুক পেজ