রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষের উদ্যোগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন ১২ শিক্ষার্থী জামালপুরের শ্রীপুরে সড়ক পাকা করণের দাবি বকসিগঞ্জ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুর মুত্যু কুয়াকাটায় অতিরিক্ত মদ্যপানে পর্যটকের মৃত্যু ঋণ নয় ক্ষতিপূরণের ন্যায্যতার দাবিতে পাথরঘাটায় সাইকেল র‍্যালি শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জামালপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পেল মানবিক সহায়তা সেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের কেন্দ্রীয় পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত দেওয়ানগঞ্জ সড়ক দূর্ঘটনায় স্কুল  শিক্ষক নিহত, আহত এক বরিশাল থেকে ঢাকা মহা সমাবেশের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা

যুদ্ধের উত্তেজনায় ভারত-পাকিস্তান- কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬

অনলাইন ডেস্ক

সংবাদটি শেয়ার করুন....

পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ধাওয়া করে শাস্তি দেওয়া হবে হামলাকারীদের-মোদি * পানিচুক্তি স্থগিত করা ‘পানিযুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল। সিন্ধুর প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে আমাদের অধিকার’-ইসলামাবাদ

 

দু-দশকেরও বেশি সময় পর ফের রণ মেজাজে ভারত-পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার দুই ‘দা-কুমড়ো’ প্রতিবেশী। দুই দেশের সীমান্তেই যুদ্ধের দামামা। সেনা-নৌ-বিমান; তিন বাহিনীই প্রস্তুত। আরব সাগরে রণতরী, ক্ষোপণাস্ত্র পরীক্ষা, নিজ নিজ সীমানায় যুদ্ধবিমানের মহড়া। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের কূটনীতির মাঠেও টানটান উত্তেজনা। চীন-যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সঙ্গে শলাপরামর্শে অস্থির দুপক্ষই।

 

 

১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধেও এমন সাজসাজ রব ওঠেনি দুই ভূ-খণ্ডে। সবমিলিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের উত্তেজনা চলছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। মঙ্গলবার বিকালে জম্মু-কাশ্মীরের ‘সুইজারল্যান্ড’খ্যাত পর্যটনসমৃদ্ধ অঞ্চল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের নিহত হওয়ার ঘটনা থেকেই এই ‘যুদ্ধংদশা’। বরাবরের মতো এবারও পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। প্রত্যাখ্যান করছে ইসলামাবাদ। এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডন, এএনআই।

বৃহস্পতিবার বিহারে এক সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত’ ধাওয়া করে শাস্তি দেওয়া হবে হামলাকারীদের। যেসব সন্ত্রাসবাদী এই হামলা চালিয়েছে এবং যারা এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছে, তারা এমন শাস্তি পাবে, যা তাদের কল্পনারও অতীত। হামলার একদিন পর এদিন প্রথম মুখ খুললেন তিনি। বলেন, আজ বিহারের মাটি থেকে আমি গোটা বিশ্বকে বলতে চাই, ভারত অবশ্যই প্রত্যেক সন্ত্রাসবাদীকে খুঁজে বের করবে।

 

 

তাদের চিহ্নিত করবে এবং শাস্তি দেবে। শাস্তি দেবে তাদের মদদদাতাদেরও। ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসবাদীদের কোমর ভাঙবে। শুরু থেকেই হিন্দিতে ভাষণ দিচ্ছিলেন মোদি। কিন্তু এই মন্তব্য করার সময় ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করেন। মনে করা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় ভারতের অনমনীয় অবস্থান গোটা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট করতেই ইংরেজিতে জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। মোদি আরও বলেন, হামলা কেবল নিরীহ পর্যটকদের উপরেই করা হয়নি।

 

 

দেশের শত্রুরা ভারতের আত্মার ওপর হামলা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।’ এদিনই ভারতের নৌবাহিনী আরব সাগরে একটি এন্টি-মিসাইল পরীক্ষা চালায়। এক্সে দেওয়া পোস্টে জানায়, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সুরাত একটি দ্রুতগামী ও নিচু দিয়ে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকে সফলভাবে ধ্বংস করেছে। স্থলপথে ‘শত্রু’র সাঁজোয়া গাড়ি ধ্বংসে সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনীও। রাজস্থানের জয়সলমেরে ডিফেন্স রিসার্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বলা হচ্ছে ‘ম্যান পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল’ (এমপি-এটিজিএম)।

 

 

কাঁধে বহনযোগ্য। রাফায়েল এসইউ (সু) ৩০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ‘এক্সারসাইজ আক্রমণ’ নামে মহড়া শুরু করেছে দেশটির বিমানবাহিনী। পালটা প্রস্তুতির ধোয়া উড়ছে পাকিস্তানেও। ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত করাচি উপকূলে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে দেশটির নৌবাহিনী। সীমান্ত ঘেঁষা চৌকিগুলোতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কড়া হুঁশিয়ার দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও । বুধবার ভারতের দেওয়া ৫ পাটকেলের (নিষেধাজ্ঞা ) বদলা হিসাবে বৃহস্পতিবার ৮ প্রত্যাঘাত করেছে পাকিস্তান।

 

জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে বেশ কয়েকটি পালটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তার দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়। বলা হয়েছে, পাকিস্তান কঠোরভাবে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি। এককভাবে এই চুক্তি স্থগিতের কোনো বিধান নেই।

 

সিন্ধু নদীর পানি পাকিস্তানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, তা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে এবং যেকোনো মূল্যে এই পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যেকোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেওয়া হবে।

 

 

আরও বলেছে, ভারতের বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে। তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া, আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো না মেনে চলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

 

 

এরই অংশ হিসাবে অবিলম্বে ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করা হচ্ছে। এই পথ দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের চলাচল বন্ধ থাকবে। বৈধভাবে যারা এই পথ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন তারা অবিলম্বে এখান দিয়ে ফেরত যেতে পারবেন। তবে ৩০ এপ্রিলের পরে এই সুযোগ দেওয়া হবে না।

 

ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসাও বাতিল করেছে পাকিস্তান। এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। অবিলম্বে তাদের পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। তাদের সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদেরও ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহণ সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে ভারতের নেওয়া ৫ পদক্ষেপের মধ্যে সব থেকে মারমুখী হলো ‘সিন্ধু পানিচুক্তি’ স্থগিত।

 

আর এতেই ফুঁসে ওঠে পাকিস্তান। বুধবার রাতেই দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি পানিচুক্তি স্থগিত করাকে ‘পানিযুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল বলে উল্লেখ করেন। সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘সিন্ধুর প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে আমাদের অধিকার এবং আমরা তা পূর্ণ শক্তিতে রক্ষা করব আইনত, রাজনৈতিকভাবে এবং বৈশ্বিকভাবে।’ একই সুর শোনা গেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের গলাতেও। তারও দাবি, সিন্ধু পানিচুক্তি প্রত্যাহার হলে তা ‘যুদ্ধের পদক্ষেপ’।

বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে শেষে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানিচুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। নয়াদিল্লির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো, দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক উপদেষ্টাকে বহিষ্কার।

 

 

একই সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতের হাইকমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে নয়াদিল্লি। চতুর্থ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দুই দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে। পঞ্চমটি হলো, সীমান্ত চৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভারতে আসাও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পাকিস্তানি ভিসায় যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।


সংবাদটি শেয়ার করুন....



আমাদের ফেসবুক পেজ