সাক্ষাৎকার: জনাব জাহানদার আলী জাহান
সদস্য সচিব, মাদারীপুর জেলা বিএনপি।
-প্রশ্ন: বিএনপি ‘ক্লিন ইমেজ’ধারী প্রার্থী বাছাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। জেলা পর্যায়ে এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে।
উত্তর: কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদারীপুর জেলা বিএনপিও প্রার্থিতা বাছাইয়ে সততা, ত্যাগ, এবং জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দিচ্ছে আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিচ্ছি।
যারা দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, কোনো অপকর্মে জড়িত নন—তাদের নাম সুপারিশের জন্য তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: ‘ক্লিন ইমেজ’ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান।
উত্তর: ক্লিন ইমেজ মানে শুধুমাত্র দুর্নীতিমুক্ত হওয়া নয়। সেইসঙ্গে জনবান্ধব, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, দলে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা, এবং এলাকায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি থাকা প্রার্থীকেই আমরা বুঝি। মানুষ যাকে দেখলে বলে এই লোকটাকে আমরা বিশ্বাস করি।
প্রশ্ন: ত্যাগী নেতাদের বিষয়ে কী ধরনের মানদণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে।
উত্তর: যারা ২০১৮ সালের পর থেকে বিশেষ করে ২০২৩ সালের আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন, গ্রেফতার হয়েছেন, হয়রানির শিকার হয়েছেন, কিন্তু দল ছাড়েননি—তাঁরাই আমাদের চোখে ত্যাগী। শুধু পদ-পদবী থাকা নয়, মাঠে উপস্থিতি প্রমাণ করে কে কতটা ত্যাগ করেছেন।
প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায় বিতর্কিত লোকজন টাকা-পয়সা খরচ করে মনোনয়ন আদায় করে নেন সেটা ঠেকাতে জেলা বিএনপির ভূমিকা কি।
উত্তর: আমরা এই বার্তাটা পরিষ্কারভাবে দিচ্ছি—অর্থ দিয়ে প্রার্থী হওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এবার এ বিষয়ে কঠোর, জেলা থেকে কোনো বিতর্কিত বা আর্থিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী কাউকে আমরা সুপারিশ করবো না।
প্রশ্ন: মাদারীপুর জেলার বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির অবস্থান কেমন।
উত্তর: আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী এখন, তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা এসেছে। মানুষ পরিবর্তন চায়, এবং বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে, আমরা যদি সৎ ও উপযুক্ত প্রার্থী দিতে পারি, তাহলে মাদারীপুরেও ভালো ফল অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: জোট গঠন বা নির্বাচনী সমন্বয় নিয়ে কী প্রস্তুতি আছে।
উত্তর: জোট গঠন বা আসন সমন্বয়ের বিষয়টি মূলত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হবে, তবে জেলা পর্যায়ে আমরা নীতিগতভাবে সবাইকে সম্মান করি এবং ইতিবাচক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন না হয়।
প্রশ্ন: আপনার নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য বা দর্শন কী?
উত্তর: আমি রাজনীতিকে জনসেবা হিসেবে দেখি আমি বিশ্বাস করি—দলের শক্তি নেতার নয়, নেতার শক্তি দলের কর্মীদের উপর নির্ভর করে, আমি সবসময় চেষ্টা করি কর্মীদের কণ্ঠস্বর হতে .নির্যাতিত হয়েছেন বা দলের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন—তাদেরকেই ‘ত্যাগী নেতা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি উপজেলার রিপোর্ট নিচ্ছি এবং সেই অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করছি।
প্রশ্ন: জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
উত্তর: আমরা সরাসরি তৃণমূল নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময় করছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা, জনসভায় উপস্থিতি, এবং এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া—এসব বিশ্লেষণ করেই আমরা প্রার্থীর জনপ্রিয়তা মূল্যায়ন করছি।
প্রশ্ন: দলীয় প্রস্তুতি কী পর্যায়ে রয়েছে।
উত্তর: আমরা ইতোমধ্যেই সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়েছি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভা, কর্মী সম্মেলন এবং গণসংযোগ চালাচ্ছি, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সংগঠনকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা।
প্রশ্ন: যদি কেন্দ্র থেকে কোনো বিতর্কিত প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়, তখন জেলা বিএনপি কী ভূমিকা নেবে।
উত্তর: আমরা স্পষ্ট করে কেন্দ্রকে জানিয়ে দেব যে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, দল যদি সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধি দিতে চায়, তাহলে স্থানীয় মতামতের মূল্য দিতে হবে। আমরা অবশ্যই বাস্তবতা তুলে ধরব।
প্রশ্ন: আপনি নিজে কি প্রার্থী হতে আগ্রহী।
উত্তর: এই মুহূর্তে আমি সংগঠনকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রার্থী হওয়া আমার একার সিদ্ধান্ত নয়—দলের, তৃণমূলের এবং জনগণের সমর্থন ছাড়া আমি কোনো পদক্ষেপ নিবো না।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে: নূরে আলম তাশদীদ স্টাফ রিপোর্টার।