গাইবান্ধা-০৫ (সাঘাটা–ফুলছড়ি) আসনে ভোটের সমীকরণ বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন

বোরহান উদ্দিন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ২২ নভেম্বার ২০২৫ ১০:০৪ পি.এম

২২ নভেম্বর শনিবার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাঘাটা–ফুলছড়ি নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-০৫ (সাঘাটা–ফুলছড়ি) আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে।২৪ শের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাপা কার্যত মাঠের বাইরে। ফলে প্রধান লড়াই দেখা যাচ্ছে বিএনপি ফারুক আলম সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ, জামায়াতে ইসলামী, এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে ঘিরে।

বিএনপিতে মনোনয়ন সংকট—বাড়ছে তৃণমূলে অস্থিরতা এই আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের একটি বড় অংশ তাঁর মনোনয়নে সন্তুষ্ট নয়। এবং সাধারণ মানুষের বিশাল একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক স্থানীয় নেতা বলেন,“মনোনয়ন এমন কাউকে দেওয়া দরকার ছিল—যিনি দুঃসময়ে সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন। তাছাড়া নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন বিভক্ত।”
এই বিভক্তির কারণে বিএনপির প্রচারণা কাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিশাদের মাঠ ‘জোরালো’, দিনভর গণসংযোগ বিএনপির অস্থিরতার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব নাহিদুজ্জামান নিশাদ দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন। একসময় জেলা বিএনপির প্রভাবশালী সহ-সভাপতি হলেও বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।সাঘাটা–ফুলছড়ি জুড়ে তাঁর প্রতিদিনের গণসংযোগ এখন বেশ নজরকাড়া। চরাঞ্চল, নদীতীর, হাট–বাজার—সবখানেই কর্মী–সমর্থকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।স্থানীয়দের মতে—“নিশাদ ভাই দীর্ঘদিন এলাকার মানুষের সঙ্গে ছিলেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কটাই তাঁকে ভোটের বড় শক্তি দিচ্ছে।”

জামায়াতও মাঠে সক্রিয়—চুপ নেই এনসিপিওবিএনপি ও স্বতন্ত্রের পাশাপাশি মাঠে বেশ সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনের কাঠামো সাঘাটা ও ফুলছড়িতে আগে থেকেই শক্ত, আর নির্বাচন সামনে আসতেই তাদের গণসংযোগ আরও বেড়েছে।

অন্যদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক শক্তি এনসিপি–ও চরাঞ্চল ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে।এনসিপির উপস্থিতি মূলত তরুণ ভোটের অঙ্ককে জটিল করছে বলে অনেকেই মনে করছেন।ব্রহ্মপুত্র ভাঙনকবলিত মানুষের ভোটে ‘স্থানীয় পরিচয়’ ও ‘দুঃসময়ে পাশে থাকা’ বড় ভূমিকা রাখে। দল নয়, মানুষ দেখে ভোট দেওয়ার প্রবণতা এখানে তুলনামূলক বেশি।

ফুলছড়ির প্রবীণ ভোটার আব্দুর রহমান বলেন—
যে আমাদের সময়–অসময়ে পাশে থাকেন, তাকেই ভোট দেব। নদীভাঙার মানুষ অনেক কষ্টে থাকে—কষ্ট বোঝে এমন লোক চাই।”অনেকের ধারণা—“এ আসনটি এবার দেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন হতে যাচ্ছে।”

তফসিল ঘোষণার আগেই সাঘাটা–ফুলছড়ির মাঠ উত্তপ্ত।বিএনপি কি সংগঠনের বিভক্তি কাটিয়ে প্রচারণা জোরদার করতে পারবে?নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী নিশাদই ভোটের বড় অংশ টেনে নিয়ে আসনটিকে নতুন সমীকরণে নিয়ে যাবেন?এখন পুরো সাঘাটা–ফুলছড়ি তাকিয়ে আছে নির্বাচনী দিনের দিকে।

রাজনীতি