মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
লাইফস্টাইল

প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে তাসলিমার  অদম্য তরুণী হয়ে ওঠার গল্প 

শোয়েব তাসিন, স্টাফ রিপোর্টার ১৫ সেপ্টেম্বার ২০২৫ ০৯:০৭ পি.এম

অদম্য তরুণীর গল্প অদম্য তরুণীর গল্প

" মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়। " এমন ভাবেই সাধারণ গ্রামীণ মেয়ে থেকে অসাধারণ তরুণী হয়ে ওঠে তাসলিমা। বয়স যখন ১১ তখন থেকেই ক্ষুদে প্রাণবন্ত তাসলিমা যেন আকাশ ছোঁয়ার  স্বপ্ন দেখে ছোট বেলা থেকেই। তার ইচ্ছে সে সমাজের পিছিয়ে পড়া কন্যাদের জন্য কিছু করবে। সেই স্বপ্ন প্রেক্ষাপট সামনে রেখে তাসলিমা আজ সফল তরুণী । বাধা বিপত্তি পেরিয়ে চমৎকার সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় তার বেশ সুনাম রয়েছে।

 

 

পাথরঘাটার প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে তাসলিমা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ করে৷ ১১ বছর বয়সে স্কুলে কবিতা আবৃত্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয় সে। পরবর্তীতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কৃত্বিতের ছাপ রেখে সেরা বক্তা হয়। নেতৃদানের গুণাবলির জন্য স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচিত হন। তাসলিমা পাথরঘাটার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মানিকখালী  রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে পাথরঘাটার সরকারী হাজী জালাল উদ্দীন মহিলা  কলেজে ভর্তি হয়ে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত হয়ে কাজ করে। 

 

 

ছোটবেলা থেকেই সমাজের পিছিয়ে পড়া কন্যাসন্তানদের জন্য কাজ করার তার প্রবল আগ্রহ। সে গ্রামের অনেকগুলো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে । পরবর্তীতে সেই মেয়েদের আবার শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে এনে সুন্দর জীবন গড়তে সহযোগিতা করে। তাসলিমা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক আবৃত্তি অভিনয় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং জেলা পর্যায়ে পুরষ্কার পায়।

 

তাসলিমা বাকপটু একজন মেয়ে এবং নারীদের নিয়ে সুন্দর  কাজ করার জন্য অনেকের কাছে অগ্নিকন্যা নামে খ্যাত। তাসলিমা শিশু সংগঠন এনসিটিএফ এর সভাপতি দায়িত্ব পালন করে। তারুণ্যের বাংলাদেশ যুব সংস্থা নামের একটি সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্যের দায়িত্ব পালন করতেছেন।  এছাড়াও যুব রেড ক্রিসেন্ট পাথরঘাটার  সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন৷ 

তাসলিমা কন্যাশিশুদের জন্য ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০২৩ সালে বিশ্ব কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে গার্লস টেকওভারে এক ঘন্টার জন্য পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতীকি দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালন করার সময় পিছিয়ে পড়া কন্যাশিশুদের নিয়ে তার পরিকল্পনা এবং শিশুদের মেধাবিকাশে তার উদ্যোগ সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। তার পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ তখনকার সবার কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে৷  তাসলিমা বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছে। 

 

 

তাসলিমা জানান, " আমি পরবর্তী বিশ্বকে কন্যাশিশুর জন্য এক নিরাপদ পৃথিবী বিনির্মানের স্বপ্ন দেখি,সেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না , কোনো সহিংসতা থাকবে না।পিছিয়ে পড়া নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে সবসময়। পৃথিবী হবে নারী এবং শিশু বান্ধব এছাড়াও প্রতিটা মানুষ যেন নিরাপদে সুখে বসবাস করতে পারে সেই স্বপ্ন দেখি। "

 

তাসলিমার জীবনের গল্প আজ প্রমাণ করে— প্রত্যন্ত গ্রামের একটি মেয়ে স্বপ্ন দেখলে এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে, সেও শুধু  সমাজ নয় পৃথিবী পরিবর্তনের আলো হয়ে উঠতে পারে।
 


এই সম্পর্কিত আরও খবর