মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন
কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জেলার সাবেক পুলিশ সুপার সুব্রত
কুমার হালদারের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে
আদালত।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা
ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন। এর আগে সুব্রত
কুমার হালদার উচ্চ আদালত থেকে তিন মাসের জামিনে ছিলেন। সুব্রত কুমার
সবশেষ রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। দুপুরে বিষয়টি
নিশ্চিত করেছেন দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী
পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান।
২০১৯ সালে পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে দুর্নীতির
অভিযোগে এ মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ
সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে গত ১১ জুলাই
মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের
প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।
অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন, সাবেক পুলিশ কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমন,
সাবেক কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম, সাবেক টিএসআই গোলাম রহমান ও পুলিশ
হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল সহকারী পিয়াস বালা। আরেক আসামি
মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের মৃত সফিউদ্দিন ফরাজীর ছেলে
হায়দার ফরাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,
২০১৮ সালের ২৮ মে পুলিশে টিআরসি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
করে সদর দপ্তর। পরে ওই বছরের ২৬ জুন ৩১ জন পুরুষ ও ২৩ জন নারীকে
কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগেই ২০১৯ সালের ২৪ থেকে ২৬
জুন কয়েক ধাপে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আসামিদের কাছ থেকে গচ্ছিত
অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশেষ দল।
পরে অনুসন্ধানে পুলিশ সদর দপ্তর জানতে পারে, উদ্ধার করা টাকা বিভিন্ন
চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের
সুপারিশে ২০২৩ সালের ৫ জুলাই দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে
মামলাটি করেন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে চাকরিপ্রত্যাশী ৩২ জন পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই
করে দুদক। এসব উত্তরপত্র থেকে দুদক জানতে পারে, উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার
নিচে ডান কোনায় উদ্ধৃতি চিহ্ন, হইফেনসহ বিভিন্ন প্রকার বিরামচিহ্ন দেওয়া
রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য এসব চিহ্ন দিতে বলে
অভিযুক্ত চক্রটি।
উত্তরপত্রে এসব চিহ্ন থাকা ৩২ পরীক্ষার্থীকে বেশি নম্বরও দিয়েছেন অভিযুক্ত
পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। সাবেক এই পুলিশ সুপারের হয়ে ঘুষের ৭৩
সাব ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন তাঁর বডিগার্ড নুরুজ্জামান সুমন, সাবেক
কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম, সাবেক টিএসআই গোলাম রহমান, পুলিশ
হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল সহকারী পিয়াস বালা।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পুলিশ
সদর দপ্তরের নির্দেশনা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সার্কুলার বা শর্তাবলি লঙ্ঘন করে
পেনাল কোডের ১৬১/৪২০ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২)
ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা
কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান আসামি
সুব্রত কুমার হালদার এতদিন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।
তিনি আজ মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্থায়ী জামিনের
জন্য আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে আসামির জামিন
নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন।
এ মামলার অন্য আসামিরা কারাভোগ শেষে তারা নিম্ন আদালত থেকে জামিনে
রয়েছেন।’ দুদকের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘সুব্রত কুমার
হালদার স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আমরা তার তীব্র আপত্তি
জানাই। পরে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
সুব্রত কুমারের বিরুদ্ধে দুদক স্পষ্টভাবে দুর্নীতি প্রমাণ পেয়েছে এবং
অভিযোগপত্র দাখিলও করেছে। তিনি প্রকাশ্যে ঘুষ নিয়ে অপরাধ করেছেন।
তাই রাষ্ট্র তৎপর হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাষ্ট্র ও দুদক ন্যায়বিচার
পেয়েছে।