মাদারীপুরে ক্ষমতার দাপটে ভূমি দখলই ছিল যার নেশা
এখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামী হয়ে
আত্মগোপনে আছেন
এক সময়ের জাতীয় পার্টির নেতা মনোয়ার হোসেন শরীফ ওরফে মন্টু শরীফ।
পরে আওয়ামীলীগে যুক্ত হয়ে জমি দখলের নেশায় নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
কারো কোন জমির উপর নজর পড়লেই ভয়-ভীতি, হামলা-মামলা দিয়ে দখল
করছে অন্যের সম্পদ। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগে
একাধিক মামলা চলছে।
যারা দীর্ঘ দিন মন্টু শরীফের ভয়ে মুখ খুলেনি, তারাই ৫ আগস্ট স্বৈরাচার
পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখন তিনি বৈষম্যবিরোধী হাত্র আন্দোলনে
মাদারীপুরে নিহত তাওহীদ সন্নামত হত্যা মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে
রয়েছেন। ভূক্তভোগীরা মন্টু শরীফের শাস্তি দাবী করছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরে আওয়ামীলীগের নেতাদের ছত্র-
ছায়ায় ও পুলিশ-প্রশাসন ম্যানেজ করে পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোড
এলাকার একাধিক ব্যক্তির জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে শরীফ মনোয়ার
হোসেন ওরফে মন্টু শরীফের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ভূয়া দলিল বানিয়ে নিজের ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে
জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও মারধর করে জোর করে জমি দখল
করার। শেখ হাসিনার পতনের পর এ বিষয়ে দুই একজন মুখ খুললেও অধিকাংশ
ভুক্তভোগীরা এখনো ভয়ে আতঙ্কে মুখ খুলছেন না। মুখে বললেও তাঁরা ক্যামেরার
সামনে কথা বলতে রাজি নন।
অথচ মন্টু শরীফের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত ও হত্যা মামলা চলছে। সরেজমিন
ঘুরে জানা গেছে, ভূমিদস্যুখ্যাত মন্টু শরীফ ছিলেন মূলত জাতীয় পার্টির এক
সময়ের ছাত্র সমাজের সভাপতি। এরপর জীবিকার তাগিদে চলে জান প্রবাসে।
দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর প্রবাসে থাকার পরে তিনি দেশে আসেন। পরে স্থানীয়
আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে লবিং করেন। মাদারীপুরে আওয়ামীলীগ মুলত
দুইটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি সাবেক নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান, অপরটি মাদারীপুর
৩ আসনের সাবেক এমপি আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম।
তিনি এই দুই পক্ষের সাথেই লবিং রেখে চলতেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই দুই
পক্ষের নেতাদের তার খরচে পোস্টার, ব্যানার করে দিতেন। আর এই সুযোগটাই
তিনি কাজে লাগিয়ে জমি কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন। কোন জমির উপর চোখ
পড়লে সেই জমি ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন মন্টু শরীফ। আপসে নয়তো
ঝামেলা সৃষ্টি করে। এলাকায় আধিপত্য সৃষ্টি করে ঝামেলা করতেন নিরীহ
মানুষের উপর।
মন্টু শরীফ বদি জমি কিনেন ২ শতাংশ, তিনি ভূয়া দলিল বানিয়ে দাবী করেন ৪
শতাংশ। তার কাজে কেউ বাঁধা দিতে আসলেই তাদের উপর হুমকি ও হামলা
করেন। এই ভয়েই কেউ কিছু বলতো না। ভুক্তভোগীরা নিরুপায় হয়ে থানায়
অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আদালতে
মামলা দিলেও কখনো ন্যায় বিচার পায়নি ভুক্তভোগীরা।
ফলে মামলা ঝুলে থাকে মাসের পর মাস। আর এই সুযোগেই তিনি এসকল জমি
দখল করে নিতেন। এমনই এক ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য মঞ্জুর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমার পৈত্রিক সম্পত্তির ১৫ শতাংশ জমি
অবৈধভাবে দখল করে মন্টু শরীফের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। আমার
বাবার মৃত্যুর পরে ওয়ারিশসুত্রে এই জমির মালিক আমরা। অথচ আমরা জমির
কাছে গেলে মন্টু শরীফ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের মারতে আসে।
বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দেয়।
আমরা ভয়ে আর জমির কাছে যাই না। অথচ এই জমি নিয়ে আদালতে একটি
মামলা চলছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঐ জমিতে তার নামে
সাইনবোর্ড ব্যবহার করেন কিভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।’ তিনি আরো
বলেন, ‘আল্লাহ্ আছেন সত্যি। স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে।
সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের শহীদ তাওহীদ সন্নামত হত্যা মামলার
আসামী হওয়ায় বর্তমানে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এবার হয়ত আমরা
আইনের সঠিক বিচার পাবো।’
আর একজন ভুক্তভোগী ওহাব মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ একদিন দেখি মন্টু শরীফ ও
তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাড়ির বাউন্ডারির দেয়াল ভাঙছে। আমি বাঁধা
দিতে গেলে তারা বলেন এখান দিয়ে নতুন রস্তা হবে, তাই ভেঙ্গে দিচ্ছি। অথচ
আমার জমি আমাকেই না জানিয়ে তিনি ভাঙচুর করছেন।
এরপর পুলিশে এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। আর আমাকেও হুমকি দিয়ে
যায়। তবে সরকার পতনের পর আর এখানে আসেনি।