২০ জুলাই ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ রোজ রবিবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মহাপরিকল্পনা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মহাপরিকল্পনা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের কোনো বন্দরই আন্তর্জাতিকভাবে গড়ে ওঠেনি। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরেরও সেভাবে আন্তর্জাতিক কানেকশন নেই।
আমরা নতুন এ বন্দরের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পরে নতুন সরকার এসে এ বন্দরের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পায়রা বন্দর যাতে টাকা বরাদ্দ পায়, আমি সে চেষ্টাও করে যাচ্ছি। পায়রা বন্দরকে ঘিরে বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা পায়রা বন্দরকে গ্রিন পোর্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মহাপরিকল্পনা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম সাখাওয়াত হোসেন এ কথা বলেছেন।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের একটি হোটেলে এ কর্মশালা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছেন, ‘আমরা বেসরকারি ও বিদেশিদের বলছি, তারা যেন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
বরিশালে যদি আমরা কনটেইনার টার্মিনাল করি, তাহলে হয়তো ভালো হবে। আমাদের দেশের নদীপথ যেন আরও সচল হয়, সে জন্যও আমি চেষ্টা করছি।
পায়রা বন্দর পর্যন্ত যদি রেললাইন চলে আসে তাহলে এ বন্দর আরও কার্যকর হবে।
মাতারবাড়ীতে আন্তর্জাতিকমানের গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা, পায়রা বন্দরের ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল এ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন।
এ সময় তিনি বলেছেন, ২০২৬ সালের জুলাই থেকে পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হবে।
বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল এবং নেদারল্যান্ডের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েল হাসকনিং দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কাজ করে পায়রা বন্দরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। তাদের গবেষণালব্দ এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হলে ভবিষ্যতে বন্দরটি দেশের এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
আগামী তিন বছরের মধ্যে পায়রা বন্দর রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেদারল্যান্ডভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েল হাসকনিং ডিএইচভির দলনেতা এবং আন্তর্জাতিক বন্দর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ মেনো মুইজ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘পায়রা বন্দরকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করা হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মংলা বন্দরের চেয়ে পায়রা বন্দরের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
আমরা মনে করছি, নতুন এ বন্দরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বেশি হবে। পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ২০২৬ সাল নাগাদ পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী হবে। ভবিষ্যতে এ বন্দর ব্যবহার করে বিনিয়োগকারী এবং অংশীজনেরা সুফল ভোগ করতে পারবে।’
মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দলনেতা এবং বুয়েটের প্রকৌশলী বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক আহমেদ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর ২০২৩ সালে মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করতে সক্ষম হই। মাস্টারপ্ল্যান পরিবর্তনযোগ্য, প্রয়োজনে এটা পরিবর্তন করা যাবে। নতুন করে যেহেতু এখানে বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে, সে কারণে এ বন্দরকে গভীর সমুদ্রবন্দর করা সম্ভব। আমরা সেভাবেই পরামর্শ দিয়েছি। বন্দর যখন পুরোপুরি সচল হবে, তখন ঠিকই এ বন্দর লাভজনক পর্যায়ে যাবে। এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
বন্দরের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমোডর মোহাম্মদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বন্দরের পাশ দিয়ে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক রাবনাবাদ চ্যানেল রয়েছে।
এ চ্যানেল ব্যবহার করে অনায়াসে পণ্য নিয়ে বিদেশ থেকে আসা জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারবে।
কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে মাস্টারপ্ল্যান ও সামগ্রিকভাবে পায়রা বন্দরের অগ্রগতিবিষয়ক মন্তব্য ও পরামর্শ দেওয়া হয়।