১৩ জুন শুক্রবার জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় এক গার্মেন্টস কর্মী শাহনাজ আক্তার পুরুষে রূপান্তরিত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শাহনাজ আক্তারের নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয়েছে তুহিন মিয়া। শাহানাজ আক্তারকে দেখার জন্য বাড়ীতে সব মানুষের ভীড় করছেন। তবে চিকিৎসকদের ধারণা মেডিকেল বিভাগে এমন হবার কোনো সুযোগ নেই। ছেলে বা মেয়ে কি হবে, তা লিঙ্গ নির্ধারক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না।
জানা গেছে, সরিষাবাড়ি উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের মেইয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাছেদের মেয়ে শাহনাজ আক্তার। ২০২৪ সালে সে স্থানীয় শামসুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে। পূর্বে তাদের পরিবারে দুই বোন ও এক ভাই ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শাহানাজ আক্তার বাবার আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে রাজধানী ঢাকায় বেঙ্গল কোম্পানি নামের একটি গামেন্টসে চাকরি নেয়। এর কিছুদিন পর থেকে সে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারে হরমোনজনিত সমস্যার কারণে তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটছে।
(কিশোরী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হতে চলেছে) টানা তিন মাস ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে শাহনাজ আক্তার পরিপূর্ণ একজন পুরুষে রূপান্তরিত হন। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক একজন ছেলে। বাবা-মা ও পরিবারের লোকজন সবাই মিলে তার বর্তমান নাম রাখেন তুহিন মিয়া।
রূপান্তিত তুহিন মিয়ার সাথে কথা হলে সে বলেছে, শারীরিক এই পরিবর্তন ঢাকায় অবস্থান করার সময় ঘটেছিল। প্রথমে লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারকে বিষয়টি জানাতে পারিনি। চিন্তিত ছিলাম যে আমার এই পরিবর্তন সমাজ ও পরিবার মেনে নেবে কিনা। অনেক ভাবনাচিন্তার পর যখন পরিবারকে বিষয়টি জানাই, ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতে বলেন। বাড়ি আসার পর দেখতে সবাই আমাকে স্বাভাবিকভাবে ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
এই স্বস্তির অনুভূতি প্রকাশ করে তুহিন আরও বলেছে, আমার খুব ভাল লাগছে। মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছি। এটা মহান আল্লাহর রহমত। বাবাকে অনেক কাজে সহায়তা করতে পারব।
তুহিনের বাবা বলেন, আমার দুই মেয়ের মধ্যে শাহনাজ আক্তার ছোট ছিল। সে পরিবারের হাল ধরতে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। কিছুদিন ধরে শুনছিলাম সে অসুস্থ। কিন্তু বাড়িতে আসছিল না। ঈদের আগে ফোন করে জানায় সে মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে ছেলের মতই দেখা যায় বলে বুঝতে পারি। পরে তাকে বাড়িতে আসতে বললে ঈদের পরের দিন সে বাড়িতে আসে।
তিনি আরও জানান, শাহানাজকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খোঁজাখুজি পর্যন্ত শুরু করেছিলাম। এখন উল্টো পাত্রী খোঁজতে হবে। “আমি ও আমার পরিবার আরেকটি ছেলে পেয়ে অনেক খুশি। এখন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
এ ব্যাপারের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জানান, মেডিকেল বিভাগে এমন হবার কোনো সুযোগ নেই। ছেলে বা মেয়ে কি হবে, তা লিঙ্গ নির্ধারক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বলা যাবে না।